বগুড়া নিউজ ২৪ঃ বগুড়ার বহুল আলোচিত ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি বগুড়ার বহিষ্কৃত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে জামিন দেয়নি হাই কোর্ট। সোমবার শুনানির পর জামিন আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ।
আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন মোমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী। তার সঙ্গে ছিলেন এএইচএম রেহানুল কবির।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ।
আসামির আইনজীবী মোমতাজউদ্দিন মেহেদী বলেন, এই মামলায় মোট ৯ জন আসামির বাকি আটজন ২০১৮ সাল থেকে হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাইরে আছেন।
“কিন্তু তাদের জামিনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। তাই তুফান সরকারও জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালত আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির উল্লাহ বলেন, “আমরা বলেছি আবেদনকারী ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি। এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারার জবানবন্দিতে ভিকটিম রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এছাড়াও এ মামলার অন্য দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রয়েছে।
“যে ঘটনার বিবরণ উঠে এসেছে এসব জবানবন্দিতে সেটি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। ফলে প্রধান আসমি হয়ে তুফান সরকার জামিন পেতে পারেন না। পরে আদালত তাকে জামিন না দিয়ে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখেছেন।”
এর আগে গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি তুফান সরকারের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়ে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ধর্ষণের মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তুফান সরকারসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ।
ধর্ষণের মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১০ জনকে এবং মস্তক মুণ্ডনের মামলায় দণ্ডবিধিতে ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি তুফান সরকার।
আসামিরা হলেন -তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা খাতুন, শ্যালিকা পৌর কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি রুমি খাতুন, শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু, কাউন্সিলর রুমকির গৃহকর্মী আঞ্জুয়ারা বেগম, তুফানের সহযোগী আতিক, মুন্না, আলী আজম দিপু, রূপম, শিমুল, জিতু ও নাপিত জীবন রবিদাস।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই এক কলেজ ছাত্রীকে কৌশলে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন তুফান সরকার। পরে ২৮ জুলাই তুফানের আত্মীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকির বাসায় নিয়ে গিয়ে মা ও মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।
ওই ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে ২৯ জুলাই বগুড়া সদর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার পরপরই প্রধান আসামি তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা, শাশুড়ি রুমি খাতুন ও শ্যালিকা পৌর কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিকে গ্রেপ্তার করে।
পরে গ্রেপ্তার করা হয় অনান্য আসামি তুফানের শ্বশুর জামিলুর রহমান রুনু, সহযোগী আতিক, মুন্না, আলী আজম দিপু, রূপম, শিমুল, জিতু ও নাপিত জীবন রবিদাসকে।
নির্যাতনের শিকার মা ও মেয়েকে রাজশাহীতে সেফ হোম ও ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে প্রথমে রাখা হলেও এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর বগুড়ার শিশু আদালতের বিচারক মো. ইমদাদুল হক মা ও মেয়েকে তার বাবার জিম্মায় নেওয়ার আদেশ দেয়।
এ ঘটনায় বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তুফান ও তার সহযোগীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়।
গত বছর ২২ জানুয়ারি বগুড়ার নারী শিশু আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন তুফান; যা উচ্চ আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেয়।