রাজশাহী প্রতিনিধিঃ চলমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও চলছে লোডশেডিং। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় সিডিউল মেপে লোডশেডিং করেও কূলকিনারা করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। অথচ জাতীয় গ্রিড লাইন থেকে রাজশাহীর জন্য পাওয়া বিদ্যুতের বড় অংশই চলে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চার্জে।
প্রতিদিন রাজশাহী মহানগরী এলাকায় চলাচলকারী প্রায় ১৬ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চার্জে ব্যবহার হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট অর্থাৎ ৬ দশমিক ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী শহরে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে গড়ে সর্বোচ্চ ৯৩ মেগাওয়াট এবং সর্বনিম্ন গড়ে ৭০ মেগাওয়াট। সে হিসাবে রাজশাহী শহরের সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশই ব্যাটারিচালিত যানবাহন চার্জে চলে যাচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ও সূত্রে জানা যায়, মহানগরীতে চলাচলের জন্য ১৬ হাজার অটোরিকশার অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ছয় আসনবিশিষ্ট অটোরিকশা রয়েছে ১০ হাজার ও তিন আসনের অটোরিকশা রয়েছে ৬ হাজার। ফলে রাজশাহী মহানগরীতে যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এই অটোরিকশা দুই রঙে ভাগ করে চলাচলের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি মাসের প্রথম ১৫ দিন সকাল ৬টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত মেরুন রঙের এবং দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পিত্তি রঙের অটোরিকশা চলাচল করছে। একইভাবে প্রতি মাসের ১৬ তারিখ থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পিত্তি রঙের এবং দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মেরুন রঙের অটোরিকশা চলাচল করছে। এছাড়া প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টার পর এবং সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে উভয় রঙের ৬ আসনবিশিষ্ট অটোরিকশা চলাচলে বাধা নেই।
এদিকে, রাজশাহী মহানগর অটোরিকশা মালিক সমিতি সূত্র জানায়, কাগজে-কলমে ১৬ হাজার অটোরিকশা চলাচলের কথা থাকলেও বাস্তবে অবৈধ রিকশাও সড়কে রয়েছে। ফলে রাজশাহী শহরে এখন গড়ে প্রায় ১৯ হাজার অটোরিকশা চলাচল করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে রাজশাহীতে সড়কের আলোকায়ন কমিয়ে আনা, রাত ৮টার পর দোকানপাট-শপিংমল বন্ধসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও অটোরিকশার কারণে বিদ্যুতের সংকট নিরসনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। তবে সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, স্বল্প ভাড়ার যান হওয়ায় নাগরিকদের সুবিধার্থেই অটোরিকশা বন্ধ করা বা কমানো যাচ্ছে না।
সরেজমিনে রাজশাহীর একাধিক অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজ ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, পাঁচ ব্যাটারির অটোরিকশায় ৬০ ও চার ব্যাটারির অটোরিকশায় ৪৮ ভোল্টের ব্যাটারির প্রয়োজন হয়। একটি অটোরিকশা সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগে সাত থেকে আট ঘণ্টা। তবে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত চার্জারের সঙ্গে এগুলোর সংযোগ লাগানো থাকে। এতে একটি অটোরিকশা প্রতিদিন বিদ্যুৎ গ্রহণ করছে ১০ থেকে ১২ ইউনিট। একটি তিন আসনবিশিষ্ট অটোরিকশায় গড়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ইউনিট বিদ্যুতের ব্যবহৃত হয়। এতে গড়ে প্রতিদিন একটি অটোরিকশায় ১০ ইউনিট করে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর বলেন, রাজশাহী শহরে অনুমোদনপ্রাপ্ত গ্যারেজ আছে ১৭৫টি। এছাড়া বাণিজ্যিক মিটার না নিয়েও অন্তত ১০০টি গ্যারেজ রয়েছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে এখন রিকশাগুলো ঠিকভাবে চার্জ করা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, সম্প্রতি রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে সোলারে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জের বিষয়ে তাদের কথা হয়েছে। ওই সময় চায়নার একটি কোম্পানির প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তারা একটি প্রযুক্তি দেখিয়েছে, যা সোলারে মাধ্যমে চলবে। মাসে মাত্র একবার অটোরিকশায় চার্জের দরকার পড়বে। এটি হলেই ভর্তুকির বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। কারণ অটোরিকশায় নিয়মিত চার্জ দিয়ে চলাচল না করালে নষ্ট হয়ে যায়। করোনায় অটোরিকশা বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে, আবার বন্ধ হলে জীবনযাপন কঠিন হবে।
এবিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ১নং প্যানেল মেয়র সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে। তবে বিদ্যুৎ তো মানুষের ব্যবহারের জন্যই তৈরি হয়। আমাদের এই গাড়িগুলো যারা ব্যবহার করে বা চালায় তারাও মানুষ। রাজশাহীতে একসঙ্গে ১১ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে, যা কমানোর উপায় নেই। কারণ অটোরিকশা হচ্ছে গরিব লোকদের যানবাহন আর সাধারণ মানুষ এই বাহনের যাত্রী। তাই এগুলো বন্ধ করলে বা কমিয়ে দিলে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে, যা বর্তমান সরকার ও আমরা কখনো তা চাই না।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) রাজশাহী বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ডিজেল দিয়ে যে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, সেটাই শুধু লোডশেডিং হওয়ার কথা ছিল। সেই ভিত্তিতে নেসকোর ভাগে পড়েছিল ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে রাজশাহীর জন্য ৬০ মেগাওয়াট ও বাকি ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রংপুরের জন্য। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় সিডিউল অনুযায়ী লোডশেডিং সম্ভব হচ্ছে না।