কালাই রুটিতে স্বাবলম্বী

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় কালাই রুটির জনপ্রিয়তা আকাশ্চুম্বী৷ কালাই রুটি এই এলাকার মানুষদের অন্যতম পছন্দের খাবার। রাজশাহী নগরীর প্রায় সব স্থানেই কালাই রুটির দোকান পাওয়া যায়। একইভাবে কোর্ট এলাকায় কালাই রুটির দোকান খুলে স্বাবলম্বী হয়েছেন বেশ কয়েকজন নারী।

রাজশাহী কোর্ট চত্বরের সামনের প্রধান সড়কের ফুটপাতে সারি সারি কালাই রুটির দোকান। অধিকাংশ দোকানিই নারী। বাড়িতে বসে না থেকে কালাই রুটির দোকান দিয়ে স্বাবলম্বী তারা৷ সংসার খরচসহ সন্তানদের লেখাপড়াও চালাচ্ছেন তারা।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কোর্ট চত্বরের সামনের প্রধান সড়কের ফুটপাতে সারি সারি কালাই রুটির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের জমজমাট ভিড়। দোকানগুলোর বেশিরভাগ মালিক নারী৷ দুই থেকে তিনজন কর্মচারী নিয়ে এসব নারীরা নিজেরাই দোকান চালাচ্ছেন।

মামলা বা অন্যান্য কাজে কোর্টে আসা মানুষরাই সাধারণত এখানকার প্রধান ক্রেতা। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, ভোজন রসিকরাও এখানে কালাই রুটি খেতে আসেন। অফিস চালুর দিনগুলোতে সকাল থেকেই জমজমাট ভীড় থাকে।

ঝর্ণা নামে এক দোকান মালিক বলেন, আগে বাড়িতেই থাকতাম। সংসারের কাজ করতাম। রিকশাচালক স্বামীর একার আয়ে টানাপোড়েন লেগে থাকত। নিজে কিছু করা চিন্তা করতে থাকি যেন সংসারের অভাব দূর হয়। তারপরই কালাই রুটির দোকান দিই। এখান থেকে আমার মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হয়৷ এখন আমাদের আর অভাব অনটন নেই।

ঝর্ণা জানান, তিনি তার মা ও ছেলেকে নিয়ে দোকান পরিচালনা করেন। তার মা কালাই রুটি তৈরি করেন। আর তিনি ও ছেলে পরিবেশনসহ অন্যান্য কাজ করেন।

পারভীন নামের আরেক দোকান মালিক বলেন, তার স্বামী রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। মাঝে মাঝে কাজ থাকে না৷ তখন খাওয়ার খরচ চালানোও কঠিন হয়ে যায়। এরপর তিনি এই কালাই রুটির দোকান দেন। তার মাসে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হয়।

প্লেটে কালাই রুটি আর বাটিতে মরিচবাটা বা বেগুন ভর্তা দেখলে যে কারো জিহ্বায় পানি আসবে। মাষকলাইয়ের ডালের গুঁড়া আর আনুপাতিক হারে চালের গুঁড়া মিশিয়ে বানানো প্রতিটি কালাই রুটির দাম ২৫ টাকা। বেগুন ভর্তা ১০ টাকা। মরিচ বাটার সঙ্গে পেঁয়াজ ও সরিষার তেল দিয়ে তৈরি ঝাল রুটির সঙ্গে বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

দোকানে কালাই রুটি খেতে পুঠিয়া উপজেলা থেকে আসা আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, জমি-জমা নিয়ে মামলায় প্রায়ই কোর্টে আসতে হয়। কোর্টে এলে এখানে কালাই রুটি প্রতিবার খাওয়া হয়৷ আগে শখ করে খেতাম। আর এখন ভালো লাগা থেকে খাই।

বাবুল নামের আরেক ক্রেতা বলেন, এত কম খরচে পেট ভরে খাবার আর কোথাও পাওয়া যায় না। একটা রুটি আর বেগুন ভর্তা নিলে মাত্র ৩৫ টাকা খরচ হয়। সঙ্গে ঝাল বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এত কম টাকায় আর কোনো খাবার পাওয়া যায় না।

তবে এসব নারী দোকানিরা জানান, তারা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকেন, ফুটপাতের দোকান কখন উচ্ছেদ হয়৷ আবার ঘর ভাড়া নিয়ে দোকান চালালে লাভের টাকা সব ভাড়াতেই চলে যায়৷ সরকার যদি স্বল্পমূল্যে স্থায়ীভাবে দোকান চালানোর জায়গা বরাদ্দ দিত তাহলে তাদের খুবই উপকার হতো বলে জানান।

রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কালাই রুটি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়া নারীরা সমাজের সবার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দোকান চালায়। আমি নিয়মিত তাদের খোঁজ নিই। তাদের সহযোগিতা করার জন্য সব সময় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কোর্ট এলাকায় দুইটি বাজার স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে৷ বাজার স্থাপন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ওইসব নারীদের স্থায়ীভাবে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ