বগুড়ায় আদিবাসী পরিষদের মিছিল ও সমাবেশ

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ আদিবাসীদের সাংবিধানিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সারাদেশে নির্যাতন এবং আদিবাসীদের ভূমি দখলের প্রতিবাদে বগুড়ায় মিছিল ও সমাবেশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে শহরে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে শহরের সাতমাথায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে জেলার সভাপতি সন্তোষ কুমার সিং এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সরেন।

সমাবেশে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে আমাদের কি চাওয়া-পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালী-আদিবাসী ভেদাভেদ ছিল না। কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি, রক্ত দিয়েছি। অথচ আজ আদিবাসীদের ওপর হামলা করে, জমি দখল করে, ধর্ষণ করে। আজকে ৯২ শতাংশ আদিবাসীর দখলে কোনো জমি নাই। আজ শেরপুরে হামলা করেছে, তেল মলিশ করার জন্য-মলম লাগানোর জন্য সম্প্রীতি মিটিং ডাকে। তারা কথা দিয়ে কথা রাখে না।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, কর্মকর্তারা কি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে,? সরকারই তো রক্ষা করে না। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইসতেহার দিয়েছিল, ২০১৪ সালে দিয়েছিল, ২০১৮ তে দিয়েছিল। অন্য দিকে আদিবাসীদের নিঃস্ব করেছে। দালালদের বিষয়ে সাবধান থাকবেন। আজকের পর যাতে শেরপুরের ৫ টি আদিবাসী পল্লীতে আর কোন হামলা না হয়। যাতে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে না পারে, আমাদের যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে দিকে সর্তক থাকতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, লড়াই জারী রাখতে হবে।”

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে রক্তের রং লাল ছিল, লাল রক্তে সিক্ত হয়েছিল সবুজ প্রকৃতি এই নিয়ে আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজ পতাকা। আর আজ সেখানে আদিবাসীদের পৃথক করা হয় কেমনে? রক্তকে পৃথক করা যায় না, কিন্তু মানুষ হিসাবে অধিকার পেতে গেলে পৃথক করে কেমনে? বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী ভাষা। আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী সংস্কৃতি। আর আজ আদিবাসীদের সেই মর্যাদা দেওয়া হয় না, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয় না।

আদিবাসীদের জন্য তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, মানুষ হিসাবে তাদের সকল মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। ভাতের অধিকার, ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পৃথক ভূমি কমিশন নিশ্চিত করতে হবে। অধিকার আদায়ে লড়াইয়ের বিকল্প নাই। লড়াইকে বেগবান করতে হবে, বাসদ সেই লড়াইয়ে সাথে থাকবে।’

সমাবেশে অন্য বক্তারা জানান, বগুড়ায় আদিবাসীদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ভূমি অধিকার নিশ্চিত করে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী লোকজনের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি জোরপূর্বক জবরদখল বন্ধ করতে হবে। এই ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। সেইসঙ্গে তাঁদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানান বক্তারা।

সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্নিদাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) গনেশ মারর্ডি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, দপ্তর সম্পাদক সুবাশ চন্দ্র হেমব্রম, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন চন্দ্র, বগুড়া জেলা বাসদের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু, নাটোর জেলার সভাপতি প্রদীপ লাকড়া, সাংগঠনিক সম্পাদক যাদু কুমার দাস, গাইবান্ধা জেলার সভাপতি ডা. সিলিমন, নওগা জেলার সদস্য সচিব মার্কিন মুরমু।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ-বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিপন রবিদাস, দপ্তর সম্পাদক সুজন কুমার রাজভর, কোষাধ্যক্ষ সন্তোষ সিংসহ প্রমুখ।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ