সিলেটকে কাঁদিয়ে ফের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ পারলেন না মাশরাফি বিন মর্তুজা। ক্রিকেট মাঠে হার না মানা নড়াইল এক্সপ্রেসের সামনে সুযোগ ছিল বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ডবুককে আরও সমৃদ্ধ করার। তবে পঞ্চমবারের মতো ট্রফিটা উঁচু করে ধরা হলো না ক্রিকেটের ২২ গজের এই মহাতারকার। উল্টো তৃতীয়বারের মতো ট্রফি জিতে মাশরাফির সেই মাইলফলকের আরও কাছে চলে আসলেন ইমরুল কায়েস।  সিলেটকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখে চতুর্থবারের মতো বিপিএলের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।  ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে কনসার্টের গান থামতেই শোনা যাচ্ছিল ‘কুমিল্লা’, ‘কুমিল্লা’ বা ‘সিলেট’, ‘সিলেট’ চিৎকার। তৈরি হয়েছিল অবিশ্বাস্য এক আবহ। ম্যাচজুড়েও থাকলো তেমন পরিবেশ। মাঠের লড়াইও চললো সমানতালে।

নাজমুল হোসেন শান্ত মাইলফলক ছুঁলেন, দলকে নিয়ে গেলেন ভালো অবস্থানে। অভিজ্ঞতার দাম বুঝিয়ে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকালেন মুশফিকুর রহিমও। আলাদা হয়ে থাকলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটিং। সিলেটের হয়ে প্রথম তিন ওভারে দারুণ করা রুবেল হোসেন ১৭তম ওভারে দিলেন ২৩ রান। ‘ফাইনালে মাশরাফি হারে না’, কথাটা বদলে গেল। কুমিল্লা পেলো চতুর্থ শিরোপার দেখা।   আগের চারবার ফাইনাল খেলে সবকটির শিরোপা জিতেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজা। সিলেটের অধিনায়কের মতো ইমরুল ও কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও সবকটি ফাইনাল খেলে শিরোপা জিতেছেন। ইমরুল-সালাউদ্দিনের রেকর্ড অক্ষুণ্ণ থাকলেও এই রেকর্ডে ছেদ পড়লো মাশরাফির। রুবেল হোসেন তার শেষ ওভারে ২৩ রান দিয়েছেন, ওই রানের খেসারত দিলো সিলেট স্ট্রাইকার্স।   বৃহস্পতিবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট। জবাব দিতে নেমে ৪ বল হাতে রেখেই জয় পায় কুমিল্লা।

টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তাদের দারুণ শুরু এনে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আন্দ্রে রাসেলের করা প্রথম ওভারে ১৮ রান তোলে সিলেট। কিন্তু পরের ওভারেই খেয়ে যায় ধাক্কা। রানের খাতা না খুলে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই তৌহিদ হৃদয়কে বোল্ড করেন তানভীর ইসলাম। গত কয়েক ম্যাচের মতো এবারও উপরে ব্যাট করতে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

 

অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে এটি ছিল তার শততম ম্যাচ। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এবার ব্যাট ঝড় তুলতে পারেননি সিলেট অধিনায়ক, ফেরেন কেবল এক রানেই। রাসেলের বলে কাভারে থাকা ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে সিলেট। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তারা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭৯ রান আসে তাদের ব্যাট থেকে। এর মাঝে শান্ত ছুঁয়ে ফেলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক।

ফাইনালের আগে তার দরকার ছিল ৪৮ রান। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন শান্ত। কিন্তু ৪৫ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রানেই থামতে হয় তাকে। ইনিংসটি খেলার পথে দুইবার জীবনও পান শান্ত। অষ্টম ওভারে তানভীর ইসলামের বলে ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শর্ট মিডউইকেটে থাকা ইমরুল কায়েস।   কিন্তু শান্তর শটের জোর এতটাই ছিল যে তা তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন কুমিল্লা অধিনায়ক। তাতে ৫১৬ রান নিয়ে আসর শেষ করেছেন শান্ত। বাঁহাতি এই ওপেনারের পর মুশফিক যোগ্যসঙ্গী হিসেবে কাউকে পাননি। একে একে বিদায় নেন রায়ান বার্ল, থিসারা পেরেরা, জর্জ লিন্ডা ও জাকির হাসান। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ রান করেন বার্ল। মুস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে দুইবার জীবন পান লিন্ডা।

পরপর দুই বলে তার ক্যাচ ছাড়েন মঈন আলী ও লিটন দাস। পুরো ইনিংসজুড়েই কুমিল্লার ফিল্ডিং ছিল অবিশ্বাস্য বাজে। তবে মুশফিক অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত। ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেন তিনি। রাসেলের করা শেষ ওভার থেকে একাই তোলেন ১০ রান। তাতে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় সিলেট। কুমিল্লার হয়ে মোস্তাফিজ দুটি, রাসেল, নারাইন, তানভীর ও মঈন নেন একটি করে উইকেট।        জবাব দিতে নেমে কুমিল্লাকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন লিটন দাস। প্রথম দুই ওভারে কুমিল্লা পায় ২৬ রান। এর মধ্যে ৮ বলে ১৫ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে। তাদের প্রথম ধাক্কা দেন রুবেল হোসেন। ৫ বলে ১০ রান করা সুনীল নারিনকে তিনি বানান জর্জ লিন্ডের ক্যাচ।  

ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দারুণ করেন লিন্ডে। ইমরুল কায়েসের উইকেট নিয়ে তিনি দেন মেডেন। এরপর দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নেন জনসন চার্লস ও লিটন দাস। এ দুজনের জুটি থেকে আসে ৭০ রান। রুবেলের বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৫ রান করা লিটনের ক্যাচ শান্ত দারুণভাবে নিলে ভেঙে যায় এই জুটি।   লিটন আউটের পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকখানি নিয়ে ফেলে সিলেট স্ট্রাইকার্স। কিন্তু রুবেল হোসেনের করা ১৭তম ওভারেই ম্যাচ বেরিয়ে যান সিলেটের মুঠো থেকে। আগের তিন ওভারে ১৬ রান দেওয়া রুবেল শেষ ওভারে দিলেন ২৩। ফলাফল ৪ বল আগেই ম্যাচ হার। রুবেলের ওই ওভার শেষে কুমিল্লার শিরোপার জন্য শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন হয় ২৯ রানের। লুক উডের ১৯তম ওভারে চার্লস দুই ছক্কা ও এক চারের ঝড় তোলেন। তাতে শেষ ওভার হয় কেবল নিয়ম রক্ষার। ৪ বল আগেই ইমরুলরা চতুর্থবারের মতো শিরোপা জেতেন।  চার্লস ৫২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৯ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। অন্যদিকে মঈন আলী ১৭ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। চতুর্থ উইকেট এই দুই জন ৪০ বলে ৭২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন।

তিন উইকেটের মধ্যে রুবেল দুটি এবং জর্জ লিন্ডে নিয়েছেন একটি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:  সিলেট স্ট্রাইকার্স : ২০ ওভারে ১৭৫/৭ (শান্ত ৬৪, হৃদয় ০, মাশরাফি ১, মুশফিক ৭৪*, বার্ল ১৩, পেরেরা ০, লিন্ডা ৯, জাকির ১, তানজিম ০*; রাসেল ৩-০-৩১-১, তানভির ৩-০-২১-১, নারাইন ৪-০-৩৩-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩১-২, মইন ৪-০-৩১-১, মুকিদুল ২-০-২১-০)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৯.৪ ওভারে ১৭৬/৩ (লিটন ৫৫, নারাইন ১০, ইমরুল ২, চার্লস ৭৯*, মইন ২৫*; রুবেল ৪-০-৩৯-২, তানজিম ৪-০-৫০-০, লিন্ডা ৪-১-১৪-১, উড ৪-০-৩৮-০, পেরেরা ১-০-১২-০, বার্ল ২-০-১৮-০, মাশরাফি ০.২-০-৩-০)।

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: জনসন চার্লস। ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট: নাজমুল হোসেন শান্ত।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮