খালেদা জিয়ার বিচার, নির্বাচন, গুম-খুন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম, নির্বাচনের অনিয়ম, মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম-খুন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

প্রতি বছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন হাজির করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, বছরজুড়ে ক্ষমতাসীন সরকারের ইন্ধনে বেআইনি হত্যা, গুম, নির্যাতন, বেআইনি কারাদণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

‘২০১৯ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্বের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে এতে। এসেছে রোহিঙ্গাদের কথাও।

প্রতিবেদনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। খালেদা জিয়ার বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারী বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে বছরজুড়ে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সম্প্রতি সময় অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়েও সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তার সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে মনে করা হয়। নির্বাচনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘটনাগুলো প্রকট ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক নিষিদ্ধ। তবে ১৯৭৪ সালে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনে কর্তৃপক্ষ চাইলে কোনও ধরনের ওয়ারেন্ট বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে পাওয়া আদেশ ছাড়াই গ্রেফতার বা আটক করতে পারে। মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনকে ব্যবহার করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের নির্বিচারে গ্রেফতারকে বৈধ বলে উপস্থাপন করে। সংবিধান অনুযায়ী গ্রেফতার বা আটকের পর এর বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার রয়েছে সকল নাগরিকের। তবে সরকার এটি প্রায়ই উপেক্ষা করে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, সরকার বিনাবিচারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে আটকে রাখে। কখনও কখনও শুধু অন্য সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহের কারণে তাদের আটকে রাখা হয়। মানবাধিকারকর্মীরা দাবি করেন, পুলিশ মিথ্যা মামলা করে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করে সরকার। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কমপক্ষে ১০০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছিল, যারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আইন একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথা বলে। কিন্তু দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এর স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট, অ্যাটর্নি ও আদালতের কর্মকর্তারা আসামির কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে। আবার রাজনৈতিক প্রভাবে রায় পরিবর্তিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, জবাবদিহিতা নিশ্চিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা ও কারাগারগুলোর শোচনীয় পরিস্থিতির কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের গুমের ঘটনাগুলোর বিষয়ে আলোচনায় জাতিসংঘের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ যে ঢাকা সফর করতে আগ্রহ দেখিয়েছিল, সে প্রসঙ্গও তুলে ধরা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবনমান ও তাদের অধিকারের বিষয়ে সমালোচনাও করা হয় এতে। বলা হয়, রোহিঙ্গারা পাচারের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ