যেসব কারণে ‘বগুড়া’ জেলা এত বিখ্যাত!

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ভৌগলিক অবস্থান থেকে পৃথিবীর মধ্যে ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ, ছোট হলেও ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ আমাদের এ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৬৪ জেলায় বিভক্ত। আর এ ৬৪ জেলারই জন্মসূত্র ইতিহাস ঐতিহ্য বিদ্যমান। একেক জেলা একেকরকম ভাবে বা অভিনবত্বে সমৃদ্ধ। বিভিন্নভাবে প্রসিদ্ধ। এ বাংলাদেশে উত্তরবঙ্গের দ্বার বা রাজধানী বলা হয় ‘বগুড়া’ জেলাকে। আসুন এক নজরে জেনে নিই বগুড়ার জেলার গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য –

বগুড়া জেলাঃ ১২৮১-১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের ২য় পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন বগরা খান বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন । তাঁর নামানুসারে বগুড়া জেলার নামকরণ করা হয়েছে।
বগুড়া উত্তরবঙ্গের একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর। এটি রাজশাহী বিভাগ এর অন্তর্গত । বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। ইহা একটি শিল্পের শহর। এখানে ছোট ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বগুড়া জেলায় প্রাচীনতম ইতিহাস রয়েছে। বগুড়া জেলা পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল । যা বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত ।বগুড়া শহরের আয়তন ৭১.৫৬ বর্গকিলোমিটার যা ২১ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত । বগুড়া শহরে “শহীদ চান্দু” নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে ।  এছাড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (সরকারি) শহর থেকে সামান্য দুরেই অবস্থিত । বগুড়া লাল মরিচ এবং  দইয়ের জন্য খুব বিখ্যাত । বগুড়া শহরে থেকে ১১ কিঃমিঃ উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত, যা একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সে সময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান মেজর জিয়াউর রহমান বগুড়ার জেলার গাবতলী উপজেলায় জন্মগ্রহন করেন।

ইতিহাস

ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলার প্রাচীনতম একটি শহর বগুড়া। ভারতের রাজা “অশক” বাংলা জয় করার পর এর নাম রাখেন পুণ্ড্রবর্ধন । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বগুড়া ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিলো ।

ভৌগোলিক অবস্থান

বগুড়া শহর করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত ।করতোয়া নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বগুড়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে । বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, পশ্চিমে নওগাঁ জেলা, দক্ষিনে সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পুর্বে যমুনা নদী ।

যোগাযোগ ব্যবস্থা

ট্রেন, বাস উভয় পথেই রাজধানী ঢাকার সাথে বগুড়ার যোগাযোগ রয়েছে ।  এছাড়া শহরের অদূরে কাহালুতে রয়েছে একটি বিমানবন্দর ।

উপজেলাসমূহ

(১) বগুড়া সদর, (২) কাহালু, (৩) শিবগঞ্জ, (৪) গাবতলি, (৫) সোনাতলা, (৬) ধূনট, (৭) আদমদীঘি, (৮) দুপচাঁচিয়া, (৯) নন্দীগ্রাম, (১০) শাজাহানপুর, (১১) সারিয়াকান্দি, (১২) শেরপুর ।

প্রধান নদীসমূহ

(১) করতোয়া, (২) বাঙ্গালী, (৩) যমুনা (৪) নাগর ।

অর্থনীতিঃ

সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বগুড়া শহরের অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নতি সাধিত হয়েছে । নতুন শহর পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তাগুলো পুনঃনির্মান এবং দু লেনে উন্নিতকরণ করা হয়েছে । এখানকার মাটি বেশ উর্বর এবং এখানে প্রচুর শস্যের উৎপাদন হয় । বিগত কয়েক বছরে বগুড়ায় লাল মরিচের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা ১০০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে । ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতির সাথে সাথে এখানকার ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাতেও এসেছে নতুন মাত্রা । সরকারি বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের শাখা রয়েছে এখানে । ২৪ ঘন্টাই শহরের যে কোনো প্রান্তে এটিএম বুথ খোলা পাওয়া যায় । ২০০৮ সালে ফ্রান্সের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যানোন গ্রুপ গ্রামীণ গ্রুপের সাথে যৌথভাবে শক্তিদই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ।

পর্যটন

পর্যটনের জন্য রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে বিখ্যাত “মহাস্থানগড়” যা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সবার কাছেই পবিত্র একটি স্থান । এছাড়াও আছে সুলতান সাহেবের মাজার শরীফ , বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাসর ঘর, গোকুল মেঢ়, যোগীর ভবণ,‍‍‌ ভাসুবিহার, ভিমের জাঙ্গল, গোবিন্দ ভিটা, মহাস্থান যাদুঘর ইত্যাদি
খেরুয়া মসজিদ(শেরপুর), টুটুলের রাজবাড়ী (মোকামতলা), সারিয়াকান্দি রয়েছে   ( কালিরঘাট,প্রেম যমুনার ঘাট, সুইচ গেট)। বগুড়া শহরে রয়েছে ছোট বড় সকলের বিনোদনের জন্য পৌরপার্ক,  মমইন পার্ক  শিশুপার্ক , ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক এবং “নওয়াব প্যালেস” যা ব্রিটিশ আমলে “নীলকুঠী” নামে পরিচিত ছিল ইত্যাদি । এখানে থাকার জন্য রয়েছে পাঁচ তারকা বিশিষ্ট  মম ইন হোটেল এবং  চার তারকা বিশিষ্ট হোটেল “নাজ গার্ডেন” ।

সংস্কৃতি

সুফি, মারাঠি, লালন ইত্যাদি এবং বগুড়া  শিল্প একাডেমি  নিয়ে বগুড়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ।  বগুড়া থেকে প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকার মধ্যে আছে দৈনিক করতোয়া, দৈনিক বগুড়া, দৈনিক চাঁদনিবাজার, দৈনিক উত্তরাঞ্চল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

শিক্ষা

দৈনিক সেরা কবি ও কবিতার সম্মাননাপত্র

পড়াশুনার জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বগুড়া জিলা স্কুল, যা ১৮৫৩ সালে স্থাপিত । নারী শিক্ষার জন্য রয়েছে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় যা ভিক্টোরিয়া। মেমোরিয়ালস গার্লস স্কুল বা ভিএম স্কুল নামেও পরিচিত এছাড়া রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ । ইংরেজি শিক্ষার জন্য রয়েছে মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজ ।  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত সরকারি আযিযুল হক কলেজ বেশ সুপরিচিত । এছাড়া আছে সরকারি শাহ সুলতান কলেজ,সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ । কারিগরি শিক্ষার জন্য রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম একটি কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট । এছাড়াও অনেক বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে ।

চিকিৎসার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন “শহীদ জিয়াউর রহমান” মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এর  প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯২সাল  । এছাড়াও আছে সরকারি নার্সিং কলেজ, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ,  একটি আর্মি মেডিকেল কলেজ ।

প্রতিষ্ঠান সমূহ

বগুড়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে এখানে রয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তার মধ্য  হোসনেয়ারা বেগম এর ঠেঙ্গামারা TMSS ব্যপকভাবে বিস্তৃত। এখানে রয়েছে আকবরিয়ার মতো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কনফেকশনারী। ভোজন রসিকদের জন্য শ্যামলী,কোয়ালিটি,এশিয়ার মতো খ্যাতিমান রেস্তোরা। থাই,চাইনিজ বা বিদেশী খাবারের জন্য আছে রানা প্লাজা, নাজ গার্ডেন(৪ তারকা বিশিষ্ট),হোটেল মম ইন ৫ তারকা বিশিষ্ট , সিয়েস্টা,সেফওয়ে,নর্থওয়ে,রেড চিলি-র মতো অভিজাত হোটেল। ব্যাগ , লোহার জিনিস-পত্র তৈরী হয় এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এ শহরে।

স্থানীয়ভাবে এখানে জুতো তৈরীতে বেশ খ্যাতি রয়েছে। আমির এন্ড সন্স, সজল, পায়ে পায়ে ইত্যাদি। শহরের বিসিকে রয়েছে বেশ কিছু শিল্প কারখানা। এর মধ্যে সাবান তৈরীর কারখানা অন্যতম।

সবচাইতে আশার বাণী এই যে, বগুড়ার স্থানীয় তরুণেরা যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়াশুনা করে এসেছে, তারা তাদের সম্পূর্ণ মেধা দিয়ে গড়ে তুলছে আধুনিক বগুড়া । তেমনই এক প্রতিষ্ঠান শূন্য-আইটি। শূন্য-আইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৪ প্রকৌশলী উদ্যোক্তার আপ্রাণ প্রচেষ্টায়। আধুনিক বগুড়ার সব ধরনের সফটওয়ার সমাধান দিচ্ছেন তারা (শুন্য আইটি ওয়েব )। সেই সঙ্গে মার্চ,২০১৩ থেকে বগুড়ার সকল মার্কেট একত্রিত হচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়,সাতমাথা  এর সাহায্যে ।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বঃ

প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮), ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের নেতা ।
মোহাম্মদ আলী বগুড়া (মৃত্যু ১৯৬৯) কূটনীতিক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ।
মেজর জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১) বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ।
খাদেমুল বাশার (১৯৩৫-১৯৭৬) বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনী প্রধান ।
আখতারুজ্জমান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭) সাহিত্যিক ও গল্পকার ।
গাজিউল হক (১৯২৯-২০০৯) ভাষা সৈনিক ।
এম. আর. আখতার মুকুল (১৯২৯-২০০৪)  লেখক এবং সাংবাদিক ।
মুশফিকুর রহিম জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ।
রোমেনা আফাজ( সাহিত্যিক) ।
আবু সাইদ( চলচিত্র নির্মাতা) ।
হোসনেয়ারা বেগম (শিল্পপতি )

প্রশাসনিক বিভাগঃ রাজশাহী
আয়তনঃ (বর্গ কিমি) ২,৯১৯
জনসংখ্যা মোটঃ  ২৯,৮৮,৫৬৭
পুরুষঃ৫০.৮৪%
মহিলাঃ৪৯.১৬%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাঃ
কলেজঃ ৪৪টি
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ঃ ২৯৯টি
মাদ্রাসাঃ ৩২৯টি
বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্বঃ মোহাম্মদ আলী (বগুড়া),
জিয়াউর রহমান,
আখতারুজ্জমান ইলিয়াস ।

প্রধান শস্যঃ ধান, পাট, গম, আলু, মরিচ, সরিষা।

উল্লেখযোগ্য শিল্পঃ কৃষি যন্ত্রাংশ ও ফাউন্ড্রি, সিরামিক, সাবান, কটনমিল
রপ্তানী পণ্যঃ সিরামিক সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রাংশ, চাল, আলু ইত্যাদি।

রচনায়ঃ-লেখক উম্মে হাবিবা

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০