ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির যাত্রা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের যেন ভোগান্তির শেষ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকায় শরীরটা যেন বেঁকে গেছে সবার। বয়স্ক নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরও প্রকট। জায়গা কম থাকায় নড়াচড়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। আর নড়াচড়া করার চেষ্টা করলে ঝাঁকুনিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গন্তব্যে কখন পৌঁছাতে পারবেন জানা নেই ঘরমুখো মানুষগুলোর। তবুও ট্রাকে চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন তারা। যাত্রীদের অনেকেই নিজেকে রশিতে বেঁধে নিয়েছেন। আবার অনেকে হাত-পার সঙ্গে পেঁচিয়ে নিয়েছেন সেই রশি। দীর্ঘ কান্তিতে অনেকেই রশি বাঁধা বা বাঁধা হীন অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছেন। একটু আরামের জন্য অনেক যাত্রী শুয়ে পড়েছেন। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে চলেছেন ঘরমুখো মানুষ। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বগুড়া শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, তিনমাথা, জাহাঙ্গীরাবাদ, বনানী, বি-ব্লক, শেরপুর ঘুরে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির এমন চিত্র দেখা যায়। প্রখর রোদ। তপ্ত সূর্য যেন বাতাসে তাপ ঢালছে। ট্রাকের ছাদে করে ফেরা ঘরমুখো মানুষগুলো যেন গরমে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে থেমে থেমে চলছে যানবাহনগুলো। আবার মহাসড়ক সামান্য ফাঁকা পেলেই যাত্রীবোঝাই বাস-ট্রাক বেপরোয়া গতিতে চলতে শুরু করে।

অন্যদিকে বাসগুলোর ভেতরের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। কোনো বাসে আসন ফাঁকা নেই। সিটিং বাসের ভেতর ফাঁকা থাকলেও লোকাল বাসগুলো ভেতরে তিল ধারণেই ঠাঁই নেই। বাসের ভেতরে বসা বা দাঁড়িয়ে থাকার স্থান না পেয়ে ঘরমুখো মানুষগুলো ট্রাকের ওপর আসন পেতে বসে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন।

আল-আমিন, শিশির খাতুন, সালমা বেগমসহ একাধিক যাত্রী জানান, ঢাকার বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকরি করেন তারা। বছরের অন্য সময় তারা বাড়িতে যেতে পারেন না। দুই ঈদের ছুটিতে গ্রামে যান তারা। তারা একেতো সামান্য বেতনে চাকরি করেন। বেতনের সিংহ ভাগ টাকা থাকা-খাওয়ায় চলে যায়। আবার ঈদে এলে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়।

তারা বলেন, নিজের ছাড়াও মা-বাবা ভাই-বোনের জন্য কাপড়সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে হয়। এরমধ্যে আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন বাবদ দ্বিগুণের অধিক টাকা গুণতে হয়। বাসের ভেতরে আসনের টিকিট মেলে না। সবমিলে তাদের মতো গরিবের এছাড়া কি-ইবা করার আছে। চাকরিতে যখন-তখন ছুটি মেলে না। কিন্তু মনতো বাড়ির জন্য কাঁদে। তাই ঈদের ছুটিকে কাজ লাগাতে তাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষগুলো নানা ভোগান্তি সহ্য করে বাড়ি ফিরতে হয়।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ