সীমান্তে গুলির আওয়াজ হলেও প্রতিবাদ জানাবে বিজিবি : মহাপরিচালক

উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার সুযোগ কম। তারপরও সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’

বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন ঘটনা বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করছে জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে একটা গুলির শব্দ হলেও তার প্রতিবাদ জানাবে বিজিবি।’ সোমবার সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন মহাপরিচালক। দুপুরে রেজুপাড়া বিওপিতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ বলেন, ‘উত্তপ্ত এ পরিস্থিতির কারণে যাতে মিয়ানমারের কোনো নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য কঠোর হবে বিজিবি। এ ছাড়া ইয়াবা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ ঠেকাতে ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত থাকছে আমাদের প্রহরীরা।’ তিনি জানান, নানা কারণে সীমান্ত সড়কের নির্মাণকাজও মাঝখানে বন্ধ ছিল। তবে তা আবারও শুরু হয়েছে। যেসব জায়গায় এখনও বন্ধ আছে সেসব জায়গায়ও শিগগিরই চালু হবে। তা ছাড়া সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত পতাকা বৈঠকের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে একটি বৈঠকেও আহ্বান জানানো হয়েছে। তারাও সাড়া দিয়েছে। শিগগিরই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করে বিজিবি মহাপরিচালক।

এদিকে, সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা স্থলমাইন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে বিদ্রোহীদের অবস্থানের কারণেই তারা এসব পুঁতে রাখছে। কিছুদিন ধরে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি ও সীমান্তে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা হতাহত হচ্ছে। তা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ ছাড়াও সীমান্তের কাছে চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে।’ উল্লেখ্য, প্রায় দুই মাস ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু, কোনার পাড়া, উত্তর পাড়া, বাইশফাঁড়ি ও চাকমা পাড়াসহ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সংর্ঘষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া মর্টার শেলসহ বিভিন্ন গোলাবারুদ বাংলাদেশের মাটিতেও এসে পড়েছিল। মিয়ানমারের জেট ফাইটার হেলিকপ্টারও কয়েকবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ঘুমধুমের কোনার পাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়।

সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি ও উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি এখন বিভিন্ন সীমান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজিবি মহাপরিচালকের সীমান্ত পরিদর্শন সম্পর্কে লে. কর্ণেল মেহেদী হোসাইন কবির বলেন, ‘সোমবার সকালে বিশেষ হেলিকপ্টার যোগে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ কক্সবাজার পৌঁছান। পরে সকাল ১০টা থেকে ঘুমধুমের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শুরু করেন।’ পরিদর্শনকালে বিজিবির সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গেও মহাপরিচালক কথা বলেন বলে জানান লে. কর্ণেল মেহেদী হোসাইন কবির।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ