মঈন উদ্দীন: রাজশাহীতে ৩টি সেতু দীর্ঘদিন ফাঁকা স্থানে দাড়িয়ে আছে। অথচ এ সেতুগুলোর সাথে নেই কোন সংযোগ সড়ক। যাতায়াতের জন্য জেলার তানোর ও বাঘা উপজেলায় সেতুগুলো প্রায় ১ কোটি ব্যায়ে নির্মাণ করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। এতে প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষের চরম ভোগান্তিতে পড়লেও নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, প্রায় ২১ বছর আগে রাজশাহীর দুই উপজেলা তানোর ও মোহনপুরের মানুষের জন্য তৈরি করা হয় একটি ব্রিজ। ব্রিজটির চারদিকে ফসলি জমি, যেদিকে চোখ যায় শুধু আমনের খেত। নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ফলে কোনো কাজে আসছে না ব্রিজটি। এছাড়া জেলার বাঘা উপজেলার চরের বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য দুটি সেতু নির্মাণ করা হলেও তা কোনো কাজেই আসছে না। ৫ বছর পরও দুইটি সেতুর সংযোগ সড়ক হয়নি। এ কারণে দুপাড়ের বাসিন্দারা সেতুর পাশ দিয়েই চলাচল করেন। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। এতে স্থানীয়রা বলছেন, ব্রিজগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
তানোর উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন। রাজশাহী-তানোর সড়কের চাঁন্দুড়িয়া মোড় থেকে নেমে দেওতলা গ্রামের মধ্যদিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়ির পার্শ্বে দিয়ে রাস্তাটি মোহনপুর উপজেলার সাথে যোগাযোগের জন্য এই ব্রিজটি তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ফলে সংযোগ সড়কটি আর তৈরি করা হয়নি। ফলে এভাবেই গত ২০ বছর ধরে সংযোগ সড়ক ছাড়াই পড়ে আছে ব্রিজটি। এরপর শুরু হয়েছে ধান ক্ষেতের মাঠ। অবশ্য বর্ষাকালে এ মাঠ শিবনদের পানিতে ডুবে যায়। প্রায় ১৫ মিটার পরে চেয়ারম্যানের পুকুর পাড়ে শেষ হয়েছে রাস্তাটি।
চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন বলেন, তৎকালিন সময়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুর সংযোগ সড়কের রাস্তা তৈরি বাকি ছিল। জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ফলে শেষ পর্যন্ত সেটি সম্ভব হয়নি। এতে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে সংযোগ সড়ক ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। মনে হয় দেখার যেন কেউ নেই।
এদিকে জেলার বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নে রয়েছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। এখানকার অধিবাসীদের চলাচলের দুর্ভোগ ঘুচাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর পদ্মার এই দুর্গম চরাঞ্চলে আলাদা দুটি নালায় দুটি সেতু নির্মাণ করে দেয়। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই কাজটি শেষ করা হয়। এরপর পাঁচটি বছর চলে গেছে। কিন্তু সড়কের অভাবে আজও অলস পড়ে আছে নির্মিত এই সেতু দুটি! এতে চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারেনি।
উপজেলার বাঘা-লালপুর সড়কের দক্ষিণে সুলতানপুর ও কড়ালি গ্রামে ৪০ ফুট দৈর্ঘ এবং ১২ ফুট প্রস্থের সেতু দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৬ লাখ টাকা। সড়কসহ সেতু দুটি করে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদারের। কিন্তু সেতু হলেও সড়ক হয়নি। সড়ক বিচ্ছিন্ন সেতু দুটির একটি হচ্ছে- সুলতানপুর সাধু মিয়ার মোড় সংলগ্ন গ্রামের দক্ষিণের পদ্মার খালের ওপর। আরেকটি এর ৫০০ গজ পূর্বে কড়ালি গ্রামের খাদেম ও জালেকের বাড়ির দক্ষিণের পদ্মার খালের ওপর। সেতু সংলগ্ন উত্তরে প্রাথমিক বিদ্যালয়। দক্ষিণে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। চারদিকেই ফসলি জমি। এই চরাঞ্চলে ৩৫টিরও বেশি পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য সেতু এলাকা পার হয়ে এপারে আসতে হয়। কারণ সেতুর উত্তর পাশেই রয়েছে সুলতানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই সেতুর দক্ষিণ ও উত্তরপারের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনই এপার-ওপার যাতায়াত করতে হয়। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ছাড়াও জীবন-জীবিকার তাগিদে চরাঞ্চলের মানুষগুলোকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুগুলো রক্ষণাবেক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে বছরের পর বছর অলস হয়ে পড়ে থাকা সেতুর চারিদিকের মাটি ধসে যাচ্ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলাচলের ক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমাতে সেতু দুটি নির্মাণ করা হলেও এখন তা মানুষের কোনো কাজেই আসছে না। তারা এখন সেতুর পাশ দিয়েই চলাচল করেন। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকায় পার হতে হয় সেতু এলাকা। দুই পাশের মাঠের ফসল ঘরে তুলতেও কষ্ট হয় কৃষকদের। বিশেষ করে বর্ষায় বেশি বেকায়দায় পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।
গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগেই এই সেতু দুটি সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। যে দুইজন ঠিকাদার ওই সেতুর কাজ করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা শিগগিরই সেতুর পাশে মাটি ফেলে সংস্কার করে সড়ক করে দিতে চেয়েছে। তারা অপেক্ষায় আছেন। এখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, সেতু দুটি তিনি নির্বাচিত হওয়ার আগের। সংযোগ সড়ক না হলে সেতু দুটি সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না।
সেতুগুলোকি তাহলে এভাবেই অলস পড়ে থাকবে? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় অধিবাসীদের মনে। দুর্ভোগই যদি নিয়তি হয় তাহলে সরকারি অর্থের অপচয় কেন? এমন প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর খুঁজছেন তারা। শুধুমাত্র সংযোগ সড়কের অভাবে এই সেতুগুলি ওপর দিয়ে মানুষ কিংবা যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।