কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বাড়ছে

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বাড়ছে। ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি নুরুল হক নুরের উপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ১২টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য। এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের উপর হামলার বিচারসহ চার দফা দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর ১২টি দলের সমন্বয়ে নব গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণে পদক্ষেপ নিতে হবে প্রশাসনকে। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে বৃহত্ কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার হামলার বিচার এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে উপাচার্য বরাবার স্মারকলিপি দিয়ে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান অনুপস্থিত থাকায় সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহিম ও মহিলা প্রক্টর সিমা ইসলাম স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের তারা বলেন, আমরা তোমাদের কথা শুনলাম। তোমাদের দাবি প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেবো। শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবি হচ্ছে, নুরুল হক নুরসহ সকল শিক্ষার্থীর ওপর হামলাকারীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও আইনানুগ বিচার করা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরকে অপসারণ করা, ডাকসুতে হামলায় আহতদের চিকিত্সার ব্যয়ভার প্রশাসনকে বহন করা, হামলায় আহতদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা এবং ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া হলে হলে দখলদারিত্ব, গেস্টরুম-গণরুম নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

এর আগে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে চার দফা দাবি আদায়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন জোটের নেতারা। উপাচার্য বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, ডাকসু ভবনে নৃশংস হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ডাকসুর ভিপি নুরসহ আহত শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো বক্তব্য আমরা পাইনি। উপরন্তু আহতদেরকেই দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রমাগতভাবে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে চলেছে। হামলাকারীরা বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ফলে সহিংসতা বেড়েই চলেছে, যার দায়ভার প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানে হল প্রশাসন বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সন্ত্রাসী দখলদারদের কাছে জিম্মি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অনেক ঘটনা প্রতিদিন ঘটে যা তারা প্রশাসনের কাছে প্রকাশ করার মতো নিশ্চয়তাও পায় না। সরকারের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের পক্ষ নিতে গিয়ে প্রতিটি ঘটনায় প্রক্টর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার থেকে শুরু হয় তাদের এ কর্মসূচি। কনকনে শীত উপেক্ষা করে সারা রাত বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকেই তালা লাগিয়ে দেন তারা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক বছরে বেতন ফি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নতুন টার্ম রেজিষ্ট্রেশনের আগেই বেতন-ফি সহনীয় মাত্রায় কমানোর দাবি জানান। এ সময় ফি কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনা না হলে তারা রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানান।

এদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিসহ সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশ প্রদানে ডিনদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের লিখিত বক্তব্য না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। যদি কোনো অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায় তবে অবশ্যই প্রত্যেককে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি হলো- আবাসন সংকট দূরীকরণ, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও কোডিং পদ্ধতির ব্যবস্থাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি অধ্যাদেশের সংস্কার তথা সাংস্কৃতিক অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি ও মুক্তচিন্তা বিকাশে অধ্যাদেশের ব্যবস্থাকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যেসব দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে তার প্রতিকার করা। উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা তাদের ৫ দফা দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন। এরপর ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলন শুরু করেছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় : গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সাথে একীভূতকরণের দাবিতে ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। এই দাবি বাস্তবায়িত না হলে আগামী ১৫ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বিভাগটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান জানান, আমরা দীর্ঘ ৭৮ দিন ধরে আমাদের বিভাগকে ইইই-এর সাথে একীভূতকরণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সমপ্রতি আমরা ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত সময়সীমা দিয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছি। যদি আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রশাসন আমাদের বিষয়টি সমাধান না করে তবে আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করার পাশাপাশি আমরণ অনশনে যাবো।

এদিকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত ১৭৬ জন অস্থায়ী কর্মচারী ৩ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। গতকালও তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে-৩ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ, চাকরি স্থায়ীকরণ ও দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মচারীর স্থায়ী নীতিমালাকরন। এ ৩ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলবে বলে তারা জানিয়েছেন। তারা প্রায় এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন।

এদিকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করায় আজ থেকে আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে। এরপর আবার আন্দোলন শুরু হবে বলে তারা জানান।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ